
প্রভাবশালীদের গোপন খেলা
সমাজ যত জটিল, ততই স্পষ্ট হয় একটি বিষয় এখানে কিছু মানুষের হাতে থাকে অদৃশ্য ক্ষমতা। এরা হলো সমাজের সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, যারা সামনের সারিতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকেন, কিন্তু আড়ালে এমন এক খেলা খেলেন, যার নিয়ম জনগণ বোঝে না। এদের খেলা এতটাই নিখুঁত, এতটাই সুপরিকল্পিত যে সাধারণ মানুষ কখনো বুঝতেই পারে না তারা কিভাবে প্রতিদিন ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণেই আজকের অধ্যায়ের নাম প্রভাবশালীদের গোপন খেলা।
প্রভাবশালী কারা?
প্রভাবশালী মানেই কেবল রাজনৈতিক নেতা নয়।
- একজন বড় ব্যবসায়ী
- একজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক
- একজন সাংবাদিক
- একজন ধর্মীয় নেতা
- একজন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
- এমনকি বিদেশে থাকা অর্থবান অভিবাসী
এরা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ক্ষমতার এক অদৃশ্য বলয় তৈরি করেন। আর সেই বলয় যখন অন্যায়কে আড়াল করে, তখন তা হয়ে যায় গোপন খেলা।
“ক্ষমতা খারাপ নয়, কিন্তু যখন সেটি গোপনে অন্যের অধিকার কেড়ে নেয়, তখনই তা অভিশাপ।” আব্দুল্লাহ আল মামুন
খেলার নিয়ম – জনতার চোখে ধুলো
প্রভাবশালীদের খেলায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা। তারা কখনো সরাসরি সত্য লুকায় না, বরং সত্যের মধ্যে মিথ্যা মিশিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করে যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
এই খেলার কয়েকটি ধাপ
- মিথ্যা প্রচারণা ছড়ানো – মিডিয়ায় নিজের ভালো কাজ দেখানো, খারাপ কাজ আড়াল করা।
- গোষ্ঠী তৈরি করা – অনুসারীদের টাকা-পয়সা, পদ, বা সুযোগ দিয়ে নিজের পাশে রাখা।
- ভয় দেখানো – কেউ সত্য বললে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া বা সামাজিকভাবে হেয় করা।
- বিচ্ছিন্ন করা – যিনি প্রতিবাদ করেন তাকে একা করে দেওয়া যাতে তিনি দুর্বল হন।
- মুখোশ পরানো – ধর্ম, সংস্কৃতি বা উন্নয়নের আড়ালে লুকিয়ে থাকা।
একটি ছোট্ট গল্প
একটি শহরে বড় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি সবাইকে সাহায্য করতেন। স্কুলে অনুদান দিতেন, মসজিদে দান করতেন, উৎসবে অর্থ দিতেন। মানুষ তাকে সম্মান করত, বলত “তিনি সমাজের দাতা।”
কিন্তু আড়ালে তিনি শ্রমিকদের বেতন কেটে রাখতেন, বিদেশি পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করতেন, আর রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দিতেন নিজের ব্যবসার সুবিধার জন্য।
একদিন আব্দুল্লাহ আল মামুন ভেতরের তথ্য বের করেনদেখলেন এই ব্যবসায়ীর দান করা অর্থ ছিল আসলে জনগণের কাছ থেকে চুরি করা টাকা। তখন তিনি উপলব্ধি করেন।
“যে আলো সবাইকে অন্ধ করে দেয়, সেই আলোর পেছনে সবচেয়ে গাঢ় অন্ধকার লুকিয়ে থাকে।”
প্রভাবশালীদের খেলার ক্ষেত্র
১. রাজনীতি
এখানে খেলা সবচেয়ে জটিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় উন্নয়নের, কিন্তু বাজেটের বড় অংশ চলে যায় ব্যক্তিগত পকেটে। আইন তৈরি হয় দুর্বলকে শাসন করার জন্য, আর শক্তিশালীরা আইন ভাঙলেও কেউ কিছু বলে না।
২. অর্থনীতি
প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা একসাথে মিলে দাম বাড়ান, আবার একসাথে মিলে কমান। ফলে সাধারণ মানুষ বোঝে না কে আসলে দোষী।
৩. শিক্ষা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও খেলা চলে। ভর্তি নীতিতে টাকার খেলা, শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব, পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা সবকিছু আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৪. সংস্কৃতি ও ধর্ম
ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রভাব ব্যবহার করে মানুষকে আবেগী করা হয়। প্রভাবশালী বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে বিশ্বাস করান, অথচ নিজের জীবনে তারা তার বিপরীত কাজ করে।
গোপন খেলার ফলাফল
- ন্যায়বিচারের অভাব – অপরাধী ধরা পড়ে না, কারণ তার প্রভাবশালী ব্যাকআপ থাকে।
- অসাম্য বৃদ্ধি – ধনীরা আরও ধনী হয়, গরিবরা আরও দুর্বল হয়।
- নৈতিক ভাঙন – মানুষ শেখে, সফল হতে হলে প্রভাবশালী হতে হবে, সৎ হতে হবে না।
- আত্মবিশ্বাস হারানো – সাধারণ মানুষ ভাবে, তারা কিছুই বদলাতে পারবে না।
প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন কেন?
কারণ তাদের হাতে থাকে।
- অর্থের শক্তি
- জনসংযোগের শক্তি
- মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ
- ভয় প্রদর্শন ক্ষমতা
- আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার
“প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে একা দাঁড়ানো মানে অন্ধকারে মশাল জ্বালানো। বাতাস প্রথমেই সেই আলো নেভানোর চেষ্টা করবে।” আব্দুল্লাহ আল মামুন
তাহলে সমাধান কোথায়?
প্রভাবশালীদের খেলা চিরস্থায়ী নয়। যদি জনগণ সচেতন হয়, তথ্য উন্মুক্ত হয়, আর সাহসী কণ্ঠ একত্রিত হয়, তাহলে এই খেলার পর্দা নামানো সম্ভব।
- জনগণের ঐক্য – একা নয়, সবাই মিলে দাঁড়াতে হবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি – শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে হবে কিভাবে প্রতারণা চলে।
- স্বচ্ছতা আইন – প্রতিটি লেনদেন ও কার্যক্রম জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে।
- বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি – যারা সত্যিকার অর্থে নৈতিকতার ভিত্তিতে এগোবে।
Join the conversation