জরুরি সংবাদ পাঠান: info@dailytotthotorongo.com আপনার এলাকার চোখ ও কান হতে পারেন! আপনার কাছ থেকে আসা প্রতিবেদন আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবি, ভিডিওসহ আপনার সংবাদ পাঠান — আমরা মনোযোগ দিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং যে গুলো প্রকাশ যোগ্য সে গুলো প্রকাশ করবো। আসুন, একসাথে সত্যিকার অর্থে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠি। ✉️ ই-মেইল করুন: info@dailytotthotorongo.com

এরা কি আমাদের চুষে খাওয়ার নতুন রাজনীতি শুরু করছে?

বাংলাদেশে আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন ও সিম সীমা—জনগণকে জিম্মি করার নতুন ফাঁদ! বিটিআরসির নীতিতে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ।
প্রকাশ: 11/01/2025 02:15:00 pm

দৈনিক তথ্য তরঙ্গ

সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ

NEIR IMEI রেজিস্ট্রেশন BTRC

NEIR, IMEI রেজিস্ট্রেশন ও সিম লিমিট সাধারণ মানুষের ওপর এক যুগান্তকারী হেলাফেলা

বাংলাদেশ আজকালকার নীতিনির্ধারণে এক অদ্ভুত মোড় নিয়েছে  যেখানে আপনার নিজের ফোন, আপনার নিজের সিম, এমনকি আপনার বিদেশ থেকে আনানো ব্যক্তিগত সেট ও নিয়ন্ত্রিত একটি সার্ভারে 'নিবন্ধন' না করলে কাজ করবে না বলা হচ্ছে। ভাবুন তো  আপনার হাতের ফোন হঠাৎ করেই নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিল; আর আপনাকে বলা হচ্ছে  "আপনার ফোন নিবন্ধন করুন, না হলে চলবে না।" এটা কি ন্যায়? না, এটা মানুষের মৌলিক যোগাযোগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নয়?। BTRC এখন NEIR নামের (National Equipment Identity Register) একটি সিস্টেম চালু করে অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেটগুলো ব্লক করার ঘোষণা দিয়েছে; সরকার জানাচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বার থেকে এই সিস্টেম কার্যকর হওয়ার কথা।

এই নীতিকে এক কথায় বলা যায়  "গায়েবি রেজিস্ট্রেশন"  আপনি কেনই বা আপনার ফোনকে একটা সার্ভারে ম্যাপ করে দিতে বাধ্য? আর যদি আপনার ফোন নষ্ট হয়ে যায়, আপনি সাধারণভাবে যে সিম ব্যবহার করেন সেটি অন্য ফোনে ঢুকিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন না  কারণ সিম-IMEI-নেইমড এনকাউন্টার করে সার্ভার অটোমেটিক নির্ধারণ করবে কোন সিম কোন ফোনে কাজ করতে পারবে। এটা কী আমাদের অধিকার?

যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায় কিংবা ভেঙে যায়, আপনি কি প্রতিদিন নতুন ফোন কিনবেন যাতে আপনার সিম কাজ করে? এই প্রশ্নগুলোর সরল উত্তর সাধারণ মানুষের জন্য 'না' হওয়া উচিত।

কিন্তু বাস্তবে নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়গুলো নিয়ে তোয়াক্কা করছে না।

বিদেশি ফোন ট্যুরিস্ট আপনি ভাবুন!

আপনি যদি বিদেশে যান, আপনার ফোন সেখানে চলে  কিন্তু যখন আপনি বাংলাদেশে ফিরবেন, কেন আপনার ফোন যে স্থানীয় নেটওয়ার্কে জন্য অনুমোদন করতে হবে? ইউরোপ বা আমেরিকায় তো কোনো ট্যুরিস্ট আসলে তাদের ফোন বন্ধ করে দেয় না,  তারা সহজেই লোকাল রোয়ামিং বা স্থানীয় সিম ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের এখানে BTRC বলছে বিদেশ থেকে আনা ফোন NEIR-এ নিবন্ধন করা না হলে তা ব্লক করা হবে  তাহলে বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশে ঘুরতে এলে কী হবে? তাদের ফোন কাজ করবে না? বা তারা কী আমাদের সিস্টেমে তাদের ফোন রেজিস্টার করবে? চিন্তা করলেই হাসি আর রাগের মিশ্র অনুভূতি হয়।

সংবাদে BTRC জানিয়েছে NEIR চালু হলে অনিবন্ধিত ফোন ব্লক হবে; একই সঙ্গে তারা ব্যবহারকারীদের IMEI চেক ও নিবন্ধনের নির্দেশও দিয়েছে।

সিম-লিমিট: ১৫ থেকে ১০, ১০ থেকে ৫ সাধারণ ৫ থেকে ১ এ নিয়ে আসতে কতক্ষণ? মানুষকে ধাপে ধাপে গিলে খাওয়ার রাস্তা তৈরি করতেছে।

আরেকটি কাণ্ড  সিম-লিমিট। আগে বলা হচ্ছিল একজন নাগরিক ১৫টি সিম রাখতে পারবে, পরে হঠাৎ কমিয়ে ১০ পরে আবার ৫ এভাবে ঘোষণাগুলো আসছে। আপনি ভাবুন, একজন ছোট ব্যবসায়ী, চালক বা ব্যবসায়িক কারণে বেশ কিছু নম্বর রাখতে চান  হঠাৎ করে তাদের সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে? BTRC-র নির্দেশে ইতোমধ্যেই অনেক গ্রাহকের অতিরিক্ত সিম ডিঅ্যাকটিভেট হওয়ার খবর এসেছে; সরকারি সংবাদেরও তা উঠে এসেছে। কেন সাধারণ মানুষের যোগাযোগভাবকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে  এবং কীভাবে এটি অপারেটরদের শক্তি বাড়ায়? এই প্রশ্নগুলোর জবাব দরকার।

কারা লাভবান?  সন্দেহই যথেষ্ট

এই নীতির পিছনে যে লাভের সম্ভাবনা আছে তা এড়িয়ে যেওয়া যাবে না।

  • স্থানীয় হ্যান্ডসেট ব্যবসা/আমদানিকারীরা।
  • বড় অপারেটর-দল (কারণ তারা গ্রাহক-কন্ট্রোল বাড়িয়ে দিতে পারবে),
  • মধ্যস্থতাকারী বা সুবিধাভোগী কর্পোরেট ক্লিকরা এরা সবাই নীতির সুফল পেতে পারে। ইতিহাস বলে, কঠোর নিয়ন্ত্রণ সর্বদা বাজারে শক্ত-পজিশনধারীদেরই কাজে লাগে। তাই সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করতে হবে: এই নীতি কি স্বচ্ছভাবে নেওয়া হয়েছে? জনকল্যাণ কি প্রথম লক্ষ্য ছিল, নাকি সেটা ছিল কেবল বাজার-নিয়ন্ত্রণ? অনেক সংবাদপত্রই এই বিষয়ে সোশ্যাল-একোনমিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

এই নীতির বিপর্যয় এবং তার সম্ভাব্য মানবিক প্রভাব

  • দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত: ফোন বিকল হলে, যাত্রায় হলে বা কোর্ট/হাসপাতালে জরুরি অবস্থায় ফোন কাজ না করলে সাধারণ মানুষের কী দায়?
  • ব্যবসা ও আয়ের ক্ষতি: ভোক্তা, ডেলিভারি কর্মী, ফ্রিল্যান্সার  অনেকে একাধিক নম্বর ব্যবসার জন্য রাখে; সীমাবদ্ধতা তাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়।
  • পেশাগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: কেউ নিজের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক নম্বর আলাদা রাখতে চায়। একটি এনআইডি-সংলগ্ন সিম-বাধ্যতা গোপনীয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • ভিত্তিহীন প্রয়োগে বিভ্রাট: যদি রেজিস্ট্রেশন পোর্টাল খারাপভাবে কাজ করে, বা ডকুমেন্টস ভুলভাবে যাচাই করে দুর্বল মানুষের ফোন বন্ধ করে দেয় এর দায় কে নেবে?

আমরা কি করব  সাধারণ মানুষের কর্মসূচি (সোচ্চার ও সচেতন)

  1. জনসচেতনতা: যে কোনও পরিবর্তন হলে সাধারণ মানুষকে আগে জানানো উচিত; NEIR-এর মতো সিদ্ধান্তে জনগণকে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা দরকার। সংবাদপত্রে, রেডিওতে, ফেসবুক/ইউটিউবে ব্যাপকভাবে প্রচার করুন  লোককে বলুন কিভাবে IMEI চেক করবেন, কিভাবে NEIR-এ রেজিস্টার করবেন (neir.btrc.gov.bd) এবং কী ডকুমেন্ট লাগবে।
  2. প্রশাসনিক জবাবদিহিতা দাবি: BTRC, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটিকে প্রশ্ন করুন  এই নীতির প্রয়োজনীয়তা, গ্রেস-পিরিয়ড, ভুক্তভোগী সুরক্ষা ও আপিল-প্রক্রিয়া কী? নিয়ম পরিবর্তনে জনগণের মতামত নেয়া হয়েছে কি? জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
  3. আইনি চ্যালেঞ্জ ও নাগরিক আন্দোলন: যদি নীতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা অপ্রতিবেশী হয়, আইনি পথে রিভিউ বা PIL (জনস্বার্থ মামলা) করা যেতে পারে। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সিভিক গ্রুপগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণ জনজাগরণ করা দরকার।
  4. ব্যক্তিগত প্রস্তুতি: যারা বিদেশ থেকে ফোন আনেন, তারা আগেই নথি রাখুন  পাসপোর্ট স্ট্যাম্প, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি। সিম-গণনা যাচাই করুন (*16001# জাতীয় কোড দিয়ে দেখা যায় কতগুলো সিম আপনার নামে)  আর সেগুলো প্রয়োজনীয় না হলেও ট্রান্সফার করুন।

সমাপনী আহ্বান: এই নীতি স্বচ্ছ ও জনবান্ধব না হলে আমরা প্রতিবাদ করবোই।

সরকার ও বিধান নির্ধারকরা জানুক জনগণ শুধুই নম্বর-নিয়ন্ত্রিত বস্তু নয়; আমরা নাগরিক, ব্যবসায়ী, কর্মজীবী। যোগাযোগের মৌলিক অধিকারকে বাজার-নিয়ন্ত্রণের চেয়েও উঁচু স্থানে রাখতে হবে। প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও প্রতারণা রোধের জন্য নিয়মনিষ্ঠতা দরকার  তবে সেটা যেন নির্ভরযোগ্য, সহনশীল ও জনগণের প্রতি দয়াশীল হয়। NEIR-কেই যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তা হোক স্বচ্ছ, গ্রেস-পিরিয়ডসহ, পর্যাপ্ত বিপরীতে হেল্পডেস্ক ও আপিল ব্যবস্থার সঙ্গে  নাহলে এর ফল হবে সাধারণ মানুষের ওপর আরেক ধরণের নিপীড়ন। সংবাদ সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবী এবং সচেতন নাগরিকদের একজোট হয়ে এটা ঠেকাতে হবে। এটা গোঁড়া বুরোক্র্যাটিক্সি নয় এটা মানুষের অধিকার ও জীবনধারার প্রশ্ন।

আপনারা যদি সচেতন হন, প্রতিবাদ করেন, এবং আইনগতভাবে প্রশ্ন তোলেন  তখনই এই ধরনের বহুল ক্ষতিকর নীতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। NEIR-এর দিকে যে বিচারবহির্ভূত পলিসি নেওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আজই প্রশ্ন তুলুন না হলে আগামী দিনে আপনি অথবা আপনার প্রতিবেশীর ফোন বঞ্চিত হবে, আর আমরা সবাই 'নিয়ন্ত্রিত' জীবনপদ্ধতিতে আটকে পড়ব।

এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য লেখা হয়েছে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে এই নীতি বাস্তবায়ন করবে।

আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
Type here...
-->