জরুরি সংবাদ পাঠান: info@dailytotthotorongo.com আপনার এলাকার চোখ ও কান হতে পারেন! আপনার কাছ থেকে আসা প্রতিবেদন আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবি, ভিডিওসহ আপনার সংবাদ পাঠান — আমরা মনোযোগ দিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং যে গুলো প্রকাশ যোগ্য সে গুলো প্রকাশ করবো। আসুন, একসাথে সত্যিকার অর্থে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠি। ✉️ ই-মেইল করুন: info@dailytotthotorongo.com

প্রবাসীদের কল্যাণ, প্রতিশ্রুতি অনেক, বাস্তবে বঞ্চনার অভিযোগ

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি প্রবাসী আয়। ২০ তলা কল্যাণ ভবনে কর্মকর্তারা বসে থাকলেও, অনেক প্রবাসী অভিযোগ করছেন বাস্তবে সেবা পাচ্ছেন না।
প্রকাশ: 8/03/2025 11:19:00 pm

দৈনিক তথ্য তরঙ্গ

সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ

প্রবাসী কল্যাণ ভবন
সংগৃহীত ছবি

প্রবাসীদের কল্যাণ: কাগজে-কলমে প্রতিশ্রুতি, বাস্তবে বঞ্চনা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ করার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়ে তারা শুধু পরিবারকে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখছেন। অথচ প্রবাসীরা যখন নিজস্ব কল্যাণ, নিরাপত্তা বা ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করেন, তখন বাস্তবে তারা কতটা সহায়তা পান—সে প্রশ্ন আজও জোরালোভাবে রয়ে গেছে।

প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য রাজধানীতে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল ২০ তলা ভবন। ভবনটির ভেতরে বসে আছেন অসংখ্য কর্মকর্তা, যাদের দায়িত্ব মূলত প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান করা, বিদেশে কর্মরতদের অধিকার রক্ষা করা, এবং জরুরি সময়ে সহায়তা প্রদান। নীতিগতভাবে এসব কর্মকর্তার অবস্থান প্রবাসীদের জন্য একটি আশার আলো হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রবাসী অভিযোগ করছেন, এই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বা যোগাযোগ করে তারা প্রত্যাশিত সেবা পান না।

প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা বলছে, জরুরি প্রয়োজনে কল্যাণ অফিসে ফোন করলে অনেক সময় ফোন ধরা হয় না। ইমেইল পাঠালে তার উত্তর আসে সপ্তাহ বা মাস পরে। কারও কাগজপত্র সমস্যা হলে বা বেতন বকেয়া থাকলে সমাধান পেতে সময় লেগে যায় মাসের পর মাস। অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ভাষায়—"কল্যাণের নামে যা আছে, তা কেবল কাগজে-কলমে, বাস্তবে নেই।"

বিদেশে প্রবাসীদের বাস্তবতা

বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। অনেকেই বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে যান, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর দেখেন চুক্তিতে যা বলা হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম বেতন বা ভিন্ন ধরনের কাজ করতে হচ্ছে। অনেকের পাসপোর্ট আটকে দেওয়া হয়, বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়, এমনকি থাকার জায়গাও অমানবিক পরিবেশে। অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এসব সময়ে দূতাবাস বা কল্যাণ অফিসের সহায়তা প্রয়োজন হয়, কিন্তু অনেকের অভিজ্ঞতায় সহায়তার পরিবর্তে সেখানে পাওয়া যায় অবহেলা।

দূতাবাস ও কল্যাণ অফিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

  • কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ধীর গতির কাজ
  • সমস্যা সমাধানে দেরি
  • অভিযোগের সঠিক তদন্ত না হওয়া
  • সাহায্যের আশ্বাস দিলেও পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া

যে ২০ তলা ভবনে কর্মকর্তারা বসে আছেন, সেটি অনেক প্রবাসীর চোখে ‘প্রতিশ্রুতির প্রতীক’ হলেও বাস্তবে সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আশাহত প্রবাসীদের নীরব সাক্ষী’।

প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্স দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই টাকা সরাসরি প্রভাব ফেলে—চাষাবাদ, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা, সব ক্ষেত্রেই প্রবাসীদের পাঠানো টাকা ব্যয় হয়। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও এই টাকা ভূমিকা রাখছে। অথচ এই অবদান রাখার পরও প্রবাসীদের অনেকেই মনে করেন, রাষ্ট্র তাদের প্রাপ্য সম্মান ও সেবা দিতে ব্যর্থ।

সমাধান কী হতে পারে?

  1. ২৪/৭ হটলাইন চালু রাখা: প্রবাসীরা যেন যেকোনো সময় ফোন করে সমস্যার কথা জানাতে পারেন।
  2. দূতাবাসে বিশেষ সহায়তা সেল: জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশেষ ইউনিট গঠন।
  3. অনলাইন সেবা বৃদ্ধি: অভিযোগ জমা ও ট্র্যাক করার অনলাইন ব্যবস্থা।
  4. কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা: দায়িত্বে অবহেলা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
  5. প্রবাসীদের আইনগত সহায়তা: বিদেশে সমস্যায় পড়লে বিনামূল্যে আইনজীবী সহায়তা।

প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির ‘নীরব যোদ্ধা’। তারা শুধু পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যও অবদান রাখছেন প্রতিনিয়ত। তাই প্রবাসীদের কল্যাণ শুধু কথার মধ্যে নয়, কাজের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। যে ২০ তলা ভবনে কর্মকর্তারা বসে আছেন, সেই ভবনের প্রতিটি তলায় যদি সত্যিকার সেবা, সহানুভূতি আর সমস্যা সমাধানের মনোভাব জন্ম নেয়, তবে প্রবাসীরা তাদের ঘামের দাম পাবে এবং দেশের অর্থনীতির এই প্রধান স্তম্ভ আরও দৃঢ় হবে।

আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
Type here...
-->