
মুখোশের আড়ালে ধ্বংসযজ্ঞ
মানুষের সংসার কেবল চার দেয়ালের ভেতর গড়া কিছু সামান্য স্বপ্ন নয়। সংসার হলো বিশ্বাস, ভালোবাসা, ত্যাগ আর সহমর্মিতার এক অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা বাঁধন। যেখানে দুটি মানুষ একে অপরকে আঁকড়ে ধরে জীবনের পথে এগিয়ে চলে, সেখানে এক একটি সম্পর্ক যেন হৃদয়ের রক্তে সিক্ত হয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেদের স্বার্থ, আনন্দ কিংবা এক অদ্ভুত মানসিক বিকৃতির কারণে অন্যের সংসারে ঢুকে সু-কৌশলে ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে। প্রশ্ন হলো—এরা কি কোনোদিন প্রকৃত সুখী হতে পারে?
স্বার্থের আগুনে সংসার পোড়ানো
এরা কখনো সরাসরি আসে না, আসে ছদ্মবেশে। বন্ধুর বেশে, শুভাকাঙ্ক্ষীর পরিচয়ে, কিংবা আত্মীয়তার চাদরে ঢেকে এরা ধীরে ধীরে সংসারের ভেতরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা বিশ্বাস অর্জন করে, হাসি দিয়ে মন জয় করে, তারপর আস্তে আস্তে সেই বিশ্বাসকেই বিষে পরিণত করে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে, সন্দেহের আগুন জ্বালায়, ছোটখাটো সমস্যাকে বড় করে উপস্থাপন করে। একসময় যে পরিবারে হাসি-আনন্দ ভরপুর ছিল, সেখানে কান্না, অভিমান আর ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়।
কিন্তু একটু থেমে ভাবা দরকার—যে ব্যক্তি অন্যের সংসার ধ্বংস করে আনন্দ পায়, তার নিজের ভেতরে আসলে কী আছে? সেখানে কি শান্তি আছে, নাকি এক অদৃশ্য হাহাকার?
সুখের সংজ্ঞা কোথায় হারিয়ে যায়
সুখ কোনো প্রদর্শনী নয়, সুখ কোনো চুরি করা সম্পদ নয়। সুখ জন্মায় ত্যাগ থেকে, ভালোবাসা থেকে, এবং অপরের কল্যাণে কাজ করার ভেতর থেকে। যে ব্যক্তি অন্যের ঘরে আগুন লাগিয়ে নিজের হৃদয়ে আলো খুঁজতে চায়, তার ভেতরে আসলে চিরস্থায়ী অন্ধকারই জন্ম নেয়।
"যে আগুন অন্যের ঘরে লাগায়, সেই আগুন একদিন তার নিজের ঘরও পুড়িয়ে ফেলে।"
ধ্বংসকারীর মুখোশ
এরা প্রায়ই নিজেদেরকে অত্যন্ত চালাক ভাবে তুলে ধরে। মনে করে, কেউ তাদের বুঝতে পারে না, তারা অসাধারণ পরিকল্পনায় অন্যের সংসার ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আসলে সমাজ, মানুষ, এমনকি ভুক্তভোগীরা সবই টের পায়। হয়তো প্রকাশ করে না, কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে এদের আসল মুখোশ একদিন খুলেই যায়।
বিশ্বাস হলো মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।কষ্টের ঢেউ ফিরে আসে
সংসার ভাঙার পেছনে যারা থাকে, তারা হয়তো ভাবে তাদের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জীবনের নিয়ম খুবই কঠিন। আজ যে অশ্রু ফেলা হলো অন্যের ঘরে, সেই অশ্রু একদিন ঢেউ হয়ে তাদের নিজের জীবনে ফিরে আসে।
প্রকৃত সুখ কার?
প্রকৃত সুখী সেই ব্যক্তি, যে অন্যের জীবনে শান্তি ছড়াতে পারে, যে সংসারের দ্বন্দ্ব মেটাতে পারে, যে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেতুবন্ধন গড়ে দিতে পারে। অন্যদিকে সংসার ধ্বংসকারীরা যতই বাহ্যিকভাবে সাজগোজ করুক, অন্তরের অশান্তি তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকাশ পায়।
শেষকথা
সংসার ধ্বংসকারীরা হয়তো ভাবে তারা জয়ী। কিন্তু আসলে তারা সবচেয়ে বড় পরাজিত। কারণ তারা হারায় নিজেদের মানসিক শান্তি, সামাজিক সম্মান, আর মানবতার আসল স্বাদ। সংসার ভাঙার আনন্দ হলো কাঁচের টুকরো হাতে নিয়ে খেলতে চাওয়ার মতো—প্রথমে ঝলমলে মনে হয়, পরে রক্তাক্ত করে দেয় নিজের হাত।
তাই যারা সু-কৌশলে অন্যের সংসারে ঢুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাদের উদ্দেশ্যে শুধু একটাই বার্তা— মুখোশ পরে যতদিন চালানো যায় চালান, কিন্তু একদিন সেই মুখোশ খুলে যাবে, আর তখন নিজের ভেতরের দগ্ধ কঙ্কাল নিয়েই আপনাদের বেঁচে থাকতে হবে। সুখ আপনাদের ধরা দেবে না, শান্তি আপনাদের দ্বারে কড়া নাড়বে না।
Join the conversation