নাঙ্গলকোটে সন্ত্রাসের রাজত্ব
দৈনিক তথ্য তরঙ্গ
সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আলিয়ারা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ ফরিদ—এমনই অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি সশস্ত্র গ্রুপ এলাকাজুড়ে দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুর ও নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ফলে সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, এবং কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছে না।
জানা যায়, শেখ ফরিদ এক সময় বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের সুযোগে তিনি ধীরে ধীরে একটি প্রভাবশালী বাহিনী গড়ে তোলেন। স্থানীয়দের দাবি, এই বাহিনী দিনে-দুপুরে জমি দখল, দোকানে চাঁদা দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা এবং বীরদর্পে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে আসছে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ
এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ ফরিদের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অনেকে অভিযোগ করেন, পুলিশের কিছু সদস্যের সাথেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যার ফলে অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে এই বাহিনী।
"প্রতিমাসে আমাদের চাঁদা দিতে হয়। না দিলে হামলা করে, দোকান ভাঙে। আমরা কী করব?"
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ ফরিদ বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে প্রতিপক্ষদের দমন করেছেন। একসময় সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি কোন সাংগঠনিক পদে নেই। তবুও তার প্রভাব এলাকায় অটুট। অনেকেই অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রশাসনও তাকে এড়িয়ে চলে।
Jamuna TV-তে সম্প্রতি সম্প্রচারিত এক প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজসহ স্থানীয়দের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ভুক্তভোগীরা ফরিদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে না। কেউ কেউ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছে, "আমরা বাঁচতে চাই, এই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি চাই।"

ফরিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার
এদিকে শেখ ফরিদ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তোলা হয়েছে। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল এসব অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।"
তার অনুসারীরাও দাবি করছেন, ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের ভাষ্য, "শেখ ফরিদ কখনোই সাধারণ মানুষের ক্ষতি করেননি। বরং এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। যারা এসব বলছে, তারা রাজনৈতিক শত্রুতা থেকে করছে।"
প্রশাসনের নীরবতা ও জনমনে ক্ষোভ
অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের অভিযোগ সত্ত্বেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন যদি চায়, তবে এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সবাই নীরব ভূমিকা পালন করছে।
"এই এলাকায় সন্ত্রাস চলছে সত্য, কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।"
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি
এলাকাবাসীর দাবী: দ্রুত তদন্ত ও বিচার
এলাকাবাসী দ্রুত ফরিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তারা চায়, অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে এলাকায় স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
সচেতন মহলের মতে, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে যদি কেউ অপরাধ করে তবে তা দেশের জন্য বিপজ্জনক বার্তা দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, তা না হলে এই ধরনের সন্ত্রাসী শক্তি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
📌 তথ্যসূত্র: Jamuna TV প্রতিবেদন, স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
Join the conversation