মুরাদনগরে নারকীয় ঘটনা ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে গ্রাম ঘোরানো।
মুরাদনগরে নারকীয় ঘটনা: ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে গ্রাম ঘোরানো
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় গত ২৬ জুন (বুধবার) দিবাগত রাত ২টার দিকে ঘটে যায় এক নারকীয় ঘটনা, যা ইতোমধ্যে পুরো দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে ঢুকে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। পরে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে বিবস্ত্র করে গ্রাম ঘোরানোর মতো চরম অবমাননাকর কাজ করে। পুরো ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। ঘটনার পর থেকে মূল অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে।
ঘটনার সূচনা: অন্ধকার ঘরে নিঃশব্দে হানা
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের এক গ্রামে ২৬ জুন রাতে তরুণীটি প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা ঘরের অন্য কক্ষে ছিলেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি চুপিসারে তরুণীর ঘরে ঢুকে পড়ে। তরুণী জেগে ওঠার আগেই তার মুখ চেপে ধরে এবং তার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।
তরুণীর চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা পরিবারের লোকজন দৌঁড়ে এসে চোর ভেবে চিৎকার শুরু করে। আশপাশের লোকজন এসে দ্রুত ঘেরাও করে ফজর আলীকে ধরে ফেলে।
জনতার প্রতিশোধ: উলঙ্গ করে ঘোরানো ও ভিডিও রেকর্ডিং
স্থানীয়রা ফজর আলীকে আটক করেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অনেকেই রাগের মাথায় তার মুখে কালি লাগিয়ে, শরীরের কাপড় খুলে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় গ্রাম ঘোরাতে শুরু করে। কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করে।
এই ভিডিওটি প্রায় ৫১ সেকেন্ড দীর্ঘ, যেখানে দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একদল মানুষের ঘেরাওয়ে পড়ে আছে, এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করানো হচ্ছে। কেউ কেউ আবার হাসাহাসি করছে, কেউ আবার ভিডিও শেয়ার করছে।
ভিডিও ভাইরাল ও আইনি পদক্ষেপ
এই লোমহর্ষক ভিডিওটি ২৭ জুন সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি এই ঘটনা। পুলিশ ২৭ জুন বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং তদন্ত শুরু করে। ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত ফজর আলীর বিরুদ্ধে তরুণীর পরিবার মুরাদনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে।
মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও নারী অধিকার সংগঠন এই ঘটনাকে দু'টি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে:
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: বিভক্ত সমাজচিত্র
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদনগরের সাধারণ মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ কেউ বলছে—"ধর্ষকের এই শাস্তি উচিতই হয়েছে"—আবার অনেকে বলছে—"এই আচরণে পুরো সমাজই আরেকটি অপরাধ করেছে"।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ:
সম্পাদকীয় মন্তব্য:
একটি অপরাধ থেকে আরেকটি অপরাধের জন্ম—এই ঘটনা আমাদের আবারও শেখায়, উত্তেজনার মধ্যে বিচার নয়, বরং বিবেচনার মধ্য দিয়েই ন্যায় নিশ্চিত করতে হয়। আইন আমাদের রক্ষা করতে পারে, যদি আমরা সেটিকে শ্রদ্ধা করি।
No comments