মাদ্রাসা ছাত্র ইরফান হোসেনের মৃত্যু
মাদ্রাসা ছাত্র ইরফান হোসেনের মৃত্যু: সাপের কামড়ে জীবন গেল ওষুধ সংকটে

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মাইরাগাঁও গ্রামে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম মো. ইরফান হোসেন (১৩), যিনি ঈদের ছুটিতে ফেনীর একটি হাফেজি মাদ্রাসা থেকে নিজ বাড়িতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের পুকুরপাড়ে খেলতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন ইরফান। চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় রাতেই তার মৃত্যু ঘটে।
ইরফান হোসেন মাইরাগাঁও (মুন্সিবাড়ি) গ্রামের মো. মোস্তাক হোসেনের ছেলে। ছেলেটি ফেনীর একটি মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে পড়াশোনা করছিল। ঈদ উপলক্ষে ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছিল সে।
মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির পাশের জামাল মিয়ার মাছের পুকুরপাড়ে খেলতে যায় ইরফান। এ সময় হঠাৎ একটি বিষধর সাপ তাকে কামড়ে দেয়। সে সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারাতে থাকে।
পরিবারের লোকজন দ্রুত ইরফানকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে সেখানে গিয়ে তারা ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হন।
চিকিৎসকরা জানান, অ্যান্টিভেনম দেওয়ার আগে দুটি ইনজেকশন – অ্যাড্রেনালিন ও নিউসিগমাই – প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু উভয় ইনজেকশনই তখন হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিল। ফলে ইরফানকে কোনো প্রকার অ্যান্টিভেনম না দিয়েই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময়ক্ষেপণ করা হয়। এরপর কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দিলে পথেই ইরফানের অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
কুমিল্লা মেডিকেলে পৌঁছানোর কিছু সময় পর রাতেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, যদি সময়মতো ইনজেকশন ও চিকিৎসা দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো ইরফানকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
"আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে, ভালো হাফেজ হচ্ছিল। শুধু একটি ইনজেকশন না থাকার কারণে সে মারা গেল! এটা কি কোনো দুর্ঘটনা, না স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি?"
- ইরফানের বাবা মো. মোস্তাক হোসেন
তিনি আরও জানান, এমন মৃত্যু যেন আর কোনো বাবা-মাকে দেখতে না হয়।
"সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম সরাসরি প্রয়োগের আগে কিছু প্রাথমিক ইনজেকশন আবশ্যক। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল না, তাই রেফার করা হয়। তবে রোগী কেন এখানে অত দীর্ঘ সময় ছিল তা আমরা খতিয়ে দেখছি।"
- নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সালাউদ্দিন
এই মৃত্যুর খবরে মাইরাগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,
"প্রতিটা হাসপাতালে যদি এমন জরুরি ওষুধ না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এত বড় উপজেলা, অথচ একটি ইনজেকশন রাখার ব্যবস্থাও নেই!"
তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করেছেন।
একজন কিশোর, যে ভবিষ্যতে হাফেজ হয়ে সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারত, আজ সামান্য একটি ওষুধের অভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এই মৃত্যুর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের। প্রয়োজন এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারকে এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।
No comments