ছেলের কাটা পা হাতে বিচারের আকুতি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে এক পিতা
ছেলের কাটা পা হাতে বিচারের আকুতি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে এক পিতা

নকলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে বিচারের দাবিতে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ছুটে বেড়াচ্ছেন একজন অসহায় বাবা। হামলার শিকার হওয়া ছেলেটি বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আর পিতার চোখে শুধুই প্রশ্ন—এই অন্যায়ের বিচার কী কখনও মিলবে?
গত ১৫ জুন সন্ধ্যার দিকে নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের বারইকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে ঘটে যাওয়া এই নির্মম ঘটনায় গুরুতর আহত হন মো. সাকিল মিয়া (১৮)। তিনি স্থানীয় বারইকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুরনো দ্বন্দ্ব থেকেই রক্তাক্ত হামলা
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, কয়েক সপ্তাহ আগে এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাকিলের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. হাসিবুলের কথা কাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি একপর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালেও স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আপস-মীমাংসা করা হয়। কিন্তু রাগ ও প্রতিশোধের আগুন নিভে যায়নি।
পরবর্তী সময়ে, ওই ঘটনার জেরে ১৫ জুন রোববার সন্ধ্যায় অতর্কিতভাবে সাকিলের ওপর হামলা চালানো হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাসিবুল, যার সঙ্গে ছিলেন অন্তিম, ইস্রাফিলসহ আরও কয়েকজন। তারা সাকিলকে একা পেয়ে হাতে ও বাম পায়ে ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
চিকিৎসার লড়াই ও পা হারানোর বেদনা
গুরুতর অবস্থায় সাকিলকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন—সংক্রমণ ঠেকাতে হলে সাকিলের বাম পা হাটু থেকে কেটে ফেলতে হবে। শেষ পর্যন্ত সেই নির্মম সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
অভিযোগপত্র, মামলা ও প্রশাসনের অবস্থান
হামলার পরদিন, সাকিলের বাবা মো. আমির হোসেন পার্শ্ববর্তী আদমপুর গ্রামের লালু বাদশার ছেলে মো. হাসিবুল (২০), মো. অন্তিম (২২), মো. ইস্রাফিল (৪৯) সহ মোট ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে অভিযুক্ত করে নকলা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগটি মামলা আকারে গ্রহণ করেছে পুলিশ।
"অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছি। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
- নকলা থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আবুল কাশেম
পিতার আর্তি—"বিচার চাই, শুধু ন্যায়ের আশায়"
১৮ জুন বুধবার, ছেলের কাটা পা একটি ব্যাগে করে নিয়ে বাবা আমির হোসেন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ান। তিনি সেনা ক্যাম্প, নকলা থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং শেরপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে ছেলের জন্য ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
তাঁর একটাই কথা, "আমার ছেলে তো আর আগের মতো হাঁটতে পারবে না, কিন্তু যারা এটা করল তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচার যদি না হয়, তাহলে আইন দিয়ে কি হবে?"
মানবিক আবেদন ও এলাকায় উত্তেজনা
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, "এমন নির্মম ঘটনার পরও যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।"
No comments