রাজনীতি: আদর্শের মঞ্চ নাকি স্বার্থের খেলা?
রাজনীতি একসময় ছিল মানুষের কল্যাণের পথ, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। কিন্তু আজকের সমাজে রাজনীতি প্রায়ই পরিণত হয়েছে ক্ষমতা দখল ও ব্যক্তিগত স্বার্থের খেলায়। জনগণের সেবার নামে শুরু হলেও, শেষ পর্যন্ত এটি অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যার আশ্রয়স্থল হয়ে পড়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন একবার বলেছিলেন, "রাজনীতি যদি নীতি হারায়, তবে তা কেবল রাজ হবে, নীতি থাকবে না।" এই কথাটিই আজকের বাস্তব চিত্র। রাজনীতির অন্ধকার করিডরে এমন অনেক গোপন দরজা আছে যেখান দিয়ে প্রবেশ করে স্বার্থপররা, কিন্তু বের হতে পারে না ন্যায়ের আলো।
ক্ষমতার মোহ: মানবতার মৃত্যু
যখন একজন মানুষ ক্ষমতার স্বাদ পায়, তখন তার বিবেক ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। শুরুতে সে ভাবতে পারে "আমি জনগণের জন্য কাজ করব", কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ তাকে এমন এক মাদক দেয় যা থেকে ফিরে আসা কঠিন।
রাজনীতিতে ঢোকার পর অনেকেই প্রথমে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু যখন সে ক্ষমতার ঘূর্ণিতে ঢোকে, তখন দেখে চারপাশে অসংখ্য লোভ, সুবিধা, সুযোগ—যা তাকে টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন একবার একজন জনপ্রতিনিধির কাছাকাছি কাজ করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, নির্বাচন জেতার পর সেই নেতা প্রতিদিন মানুষের কাছে আসতেন না। বরং তিনি এমন কিছু লোকের সঙ্গে মিশতে শুরু করেন যারা তাকে সবসময় তোষামোদ করত। একসময় সেই মানুষটির মানবিকতা হারিয়ে যায়।
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির রাজনীতি
নির্বাচনের সময় আমরা দেখি নেতারা বলেন—"আমরা রাস্তা বানাবো, স্কুল দেবো, দুর্নীতি দূর করবো।" কিন্তু ভোট শেষ হলেই এই প্রতিশ্রুতিগুলো হারিয়ে যায়।
এই সংস্কৃতি মানুষকে শেখায় যে, রাজনীতিতে মিথ্যা বলা স্বাভাবিক।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "একজন নেতা যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তবে সে শুধু মানুষকে প্রতারণা করে না, বরং নিজের চরিত্রকেও ধ্বংস করে।"
এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রাজনীতির অন্ধকার করিডরকে আরও গভীর করে তোলে, যেখানে আলো ঢোকার সুযোগ থাকে না।
দলবাজি ও গোষ্ঠীবাদ
রাজনীতির সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকগুলোর একটি হলো দলবাজি। আজকের সমাজে মানুষ দেশ বা ন্যায়ের চেয়ে দলে বেশি অনুগত। দলই তার ধর্ম, দলই তার নীতি। ফলে একজন মানুষ যদি তার দলের অন্যায়ও দেখে, তবুও সে প্রতিবাদ করে না।
আব্দুল্লাহ আল মামুন একবার এক বন্ধুকে বলেছিলেন, "তুমি তো দেখছ তোমার দলের নেতারা দুর্নীতি করছে, তবু চুপ আছো কেন?"
বন্ধু উত্তর দেয়, "দল নিয়ে কথা বললে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলা হবে।"
এভাবেই দলবাজি মানুষের বিবেককে বন্দী করে ফেলে। যখন দল সত্যের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তখন ন্যায়বিচার হারিয়ে যায়।
রাজনীতির অর্থনৈতিক দিক
আজকের দিনে রাজনীতি প্রায় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনে অংশ নেন, পরে সেই টাকার সুদ তোলেন জনগণের ঘাম থেকে।
এখানে রাজনীতি আর সেবার নয়, বিনিয়োগের ক্ষেত্র। নেতা যখন ভোটে জেতেন, তখন তিনি মনে করেন জনগণের কাছে তার কোনো দায় নেই—কারণ তিনি ইতিমধ্যেই "বিনিয়োগের রিটার্ন" আশা করছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "যে রাজনীতি বিনিয়োগ দিয়ে শুরু হয়, তা জনগণের নয়, পকেটের রাজনীতি।"
এই পকেটনির্ভর রাজনীতি মানুষকে বঞ্চিত করে, সত্যকে দূরে সরিয়ে দেয়।
রাজনীতির ভণ্ডামি: ধর্ম ও জাতীয়তার ব্যবহার
রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাকে প্রায়ই ব্যবহার করা হয় আবেগের হাতিয়ার হিসেবে। মানুষকে বিভক্ত করা হয় ধর্ম, জাতি, বা ভাষার নামে।
যখন সত্য বলা প্রয়োজন, তখন বলা হয়—"ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছো", বা "দেশদ্রোহী আচরণ করছো।"
এইভাবে সত্যকে দমন করা হয় রাজনীতির ঢাল দিয়ে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভণ্ডামি হলো, যখন মানুষ সত্য বলে তখন তাকে শত্রু বলা হয়।"
এই ভণ্ডামি সমাজে এমন এক অন্ধকার তৈরি করে, যেখানে সত্য মানুষকে বাঁচাতে পারে না, বরং বিপদে ফেলে।
তরুণ প্রজন্ম ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব
আজকের তরুণরা রাজনীতিকে সন্দেহের চোখে দেখে। কারণ তারা দেখে—যেখানে রাজনীতি থাকার কথা ন্যায়ের জন্য, সেখানে চলে ক্ষমতার বাণিজ্য।
তরুণদের মধ্যে অনেকেই পরিবর্তন আনতে চায়, কিন্তু তারা দেখে অন্ধকার করিডরের দরজাগুলো বন্ধ। তারা যদি সত্য কথা বলে, তাদের "বিরোধী" বলে চিহ্নিত করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন এক তরুণকে পরামর্শ দিয়েছিলেন—"রাজনীতি থেকে পালিও না, বরং রাজনীতিকে পরিবর্তন করো। কারণ তুমি পালালে অন্ধকার আরও ঘন হবে।"
এই শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অন্ধকার দূর করার একমাত্র উপায় হলো আলো জ্বালানো, পালিয়ে যাওয়া নয়।
রাজনীতির অন্ধকার করিডর তৈরি হয়েছে ক্ষমতার মোহ, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, দলবাজি ও ভণ্ডামির মাধ্যমে। কিন্তু এই অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়। যদি সাহসী মানুষ সত্য বলার অভ্যাস ধরে রাখে, তবে আলো ধীরে ধীরে ফিরে আসবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের মতো মানুষরা আমাদের শেখায় যে, রাজনীতি যদি জনগণের সেবার জন্য হয়, তবে সেটিই হবে আলোর পথ। কিন্তু যদি রাজনীতি শুধু ক্ষমতার জন্য হয়, তবে সেটি সমাজকে ধ্বংস করে।
এই বিশ্লেষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের সেবা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা। আমরা যদি সবাই সচেতন হই এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াই, তবে রাজনীতিকে আবারও আদর্শের মঞ্চে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
Join the conversation