জরুরি সংবাদ পাঠান: info@dailytotthotorongo.com আপনার এলাকার চোখ ও কান হতে পারেন! আপনার কাছ থেকে আসা প্রতিবেদন আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবি, ভিডিওসহ আপনার সংবাদ পাঠান — আমরা মনোযোগ দিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং যে গুলো প্রকাশ যোগ্য সে গুলো প্রকাশ করবো। আসুন, একসাথে সত্যিকার অর্থে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠি। ✉️ ই-মেইল করুন: info@dailytotthotorongo.com

পুরনো সংবিধান মানা মারাত্মক বিপদ

বিপ্লবের পর পুরনো সংবিধান কার্যকর নয়। নতুন সংবিধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমেই বিপ্লব সফল হয়।
প্রকাশ: 9/22/2025 09:53:00 am

দৈনিক তথ্য তরঙ্গ

সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ

বিপ্লব পরবর্তী সংবিধান

বিপ্লবের পর পুরনো সংবিধানের অবস্থা: একটি বিশ্লেষণ

বিপ্লব মানে হলো রাষ্ট্রের বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামো ভেঙে নতুন শাসনব্যবস্থা গঠন করা। যেকোনো বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো শাসনব্যবস্থা এবং সেই ব্যবস্থার আইনি ভিত্তি—অর্থাৎ সংবিধান—স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো, কেন এমন হয়? কেন পুরনো সংবিধানকে ধরে রাখা বিপজ্জনক? আর বিপ্লবের সাফল্যের জন্য কেন নতুন সংবিধান অপরিহার্য? এই অংশে আমরা বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্যাখ্যা করব।

১. বিপ্লবের পর পুরনো সংবিধানের আইনি অবস্থা

একটি সংবিধান তখনই বৈধ থাকে, যখন রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান সেটিকে মানে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সরকার সেটিকে কার্যকর রাখে। কিন্তু বিপ্লব ঘটলে:

  • সরকার ভেঙে যায় অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়।
  • সংসদ ও বিচারব্যবস্থা ভিন্ন নিয়মে চলতে শুরু করে。
  • সামরিক বাহিনী বা জনগণ সরাসরি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে。
এক্ষেত্রে পুরনো সংবিধান বাস্তবে কাগজে লেখা এক টুকরো ইতিহাস হয়ে দাঁড়ায়। কারণ সেটি কার্যকর রাখার মতো প্রতিষ্ঠানই আর সক্রিয় থাকে না।

২. পুরনো সংবিধান মানা মারাত্মক বিপদ

যদি কোনো বিপ্লবী অন্তর্বর্তী সরকার পুরনো সংবিধান মানতে চায়, তবে তারা কার্যত নিজেরাই স্বীকার করবে যে:

  • আগের সরকার বৈধ ছিল।
  • বিপ্লব একটি অবৈধ বিদ্রোহ।
  • সংবিধান অনুযায়ী তারা রাষ্ট্রদ্রোহী।
ফলে ভবিষ্যতে আদালত বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমকে "অবৈধ" ঘোষণা করতে পারে। এর ফলে বিপ্লবীদের শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

৩. অন্তর্বর্তী সরকারের জন্ম

বিপ্লবের পর প্রায় সব দেশেই অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) গঠিত হয়। এই সরকারের মূল লক্ষ্য হলো:

  1. রাষ্ট্রকে সাময়িকভাবে সচল রাখা।
  2. আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা।
  3. জনগণকে আশ্বস্ত করা যে একটি নতুন শাসনব্যবস্থা আসছে।
  4. নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করা।
অন্তর্বর্তী সরকার পুরনো সংবিধানের ধারায় কাজ করতে পারে না, কারণ তাতে বিপ্লবের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়।

৪. বাস্তব উদাহরণ

  • মিশর ২০১১: হোসনি মোবারক পতনের পর পুরনো সংবিধান স্থগিত করা হয়, কারণ সেটি মেনে চললে বিপ্লব ব্যর্থ হতো। পরে নতুন সংবিধান করা হয়।
  • বাংলাদেশ ১৯৭১: পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করে স্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সংবিধান চালু করা হয়। যদি পাকিস্তানের সংবিধান মেনে চলা হতো, তবে মুক্তিযুদ্ধ অর্থহীন হয়ে যেত।
  • নেপাল ২০০৬: গণঅভ্যুত্থানের পর রাজতন্ত্রের সংবিধান বাতিল করে অন্তর্বর্তী সংবিধান আনা হয়।
এই উদাহরণগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে যে বিপ্লব বা গণআন্দোলনের পর পুরনো সংবিধান কার্যকর রাখা যায় না।

৫. সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ

সাধারণ মানুষ হয়তো ভাবতে পারে, "সংবিধান তো দেশের আইন, সেটিকে মানা উচিত।" কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা উল্টো। সংবিধান তখনই কার্যকর থাকে, যখন সরকার বৈধভাবে টিকে থাকে। সরকার পতন মানে হলো সেই সংবিধানও বাতিল। যদি পুরনো সংবিধানকে আঁকড়ে ধরা হয়, তবে জনগণের আত্মত্যাগ ও রক্ত বৃথা যাবে।

৬. বিপ্লবের সাফল্যের শর্ত

বিপ্লব সফল হতে হলে তিনটি কাজ জরুরি:

  1. পুরনো সংবিধানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা।
  2. অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা।
  3. নতুন সংবিধানের আলোকে স্বচ্ছ ও বৈধ নির্বাচন আয়োজন করা।
এই তিনটি ধাপ পূর্ণ না হলে বিপ্লব ইতিহাসের পাতায় টিকে থাকবে না। বরং বিপ্লবীরা ভবিষ্যতে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।

৭. সতর্কতা

যদি অন্তর্বর্তী সরকার পুরনো সংবিধানের নামে নির্বাচন করে, তবে সেই নির্বাচন অবৈধ বলে গণ্য হবে। তখন বিপ্লবীরা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী হয়ে পড়বে। জনগণের স্বপ্নও ভেঙে যাবে। আর যারা বিপ্লব চালিয়েছে, তারা সবাই একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।

✅ সংক্ষেপে এর মূল বক্তব্য

  • বিপ্লবের পর পুরনো সংবিধান কার্যকর থাকে না।
  • পুরনো সংবিধান মানলে বিপ্লবকে ব্যর্থ করা হবে।
  • অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো নতুন সংবিধান তৈরি করা।
  • নতুন সংবিধান ছাড়া নির্বাচন ও সরকার—সবই অবৈধ হবে।

এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে বিপ্লবের পর পুরনো সংবিধান ধরে রাখা কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং বিপজ্জনকও বটে। একটি সফল বিপ্লবের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন অপরিহার্য, নতুবা সমস্ত আন্দোলন ও ত্যাগ বৃথা হয়ে যেতে পারে।

আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
Type here...
-->