জরুরি সংবাদ পাঠান: info@dailytotthotorongo.com আপনার এলাকার চোখ ও কান হতে পারেন! আপনার কাছ থেকে আসা প্রতিবেদন আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবি, ভিডিওসহ আপনার সংবাদ পাঠান — আমরা মনোযোগ দিয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং যে গুলো প্রকাশ যোগ্য সে গুলো প্রকাশ করবো। আসুন, একসাথে সত্যিকার অর্থে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠি। ✉️ ই-মেইল করুন: info@dailytotthotorongo.com

পি.আর. (Proportional Representation)

পি.আর. (Proportional Representation) পদ্ধতি ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপর্যয়: একটি গভীর সতর্কবার্তা
প্রকাশ: 7/03/2025 02:58:00 pm

দৈনিক তথ্য তরঙ্গ

সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ

দৈনিক তথ্য তরঙ্গ
প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২৫ | বিভাগ: বিশেষ নিবন্ধ

পি.আর. (Proportional Representation) পদ্ধতি ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপর্যয়: একটি গভীর সতর্কবার্তা

নির্বাচন কমিশন লোগো
নির্বাচন কমিশন লোগো

✍️ লেখক: মাইন উদ্দিন।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে কাজ করছেন।

📜 ভূমিকা

বর্তমানে দেশে "প্রোপ্রোশনাল রিপ্রেজেন্টেশন" (পি.আর.) পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাইসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল দাবি তুলেছে, দেশে যদি সংখ্যাগত ভোট অনুযায়ী সংসদ সদস্য নির্ধারিত হয়, তাহলে সকল দলের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। প্রথম শ্রবণে এটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত এবং অংশগ্রহণমূলক বলে মনে হতে পারে।

কিন্তু বাস্তবতা খুব ভিন্ন। পি.আর. পদ্ধতির ভেতরে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দেওয়ার মতো বিপজ্জনক ফাঁদ। এই ফাঁদ কেউ খুঁড়ে রাখেনি—এটি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। এবং এর পেছনে রয়েছে একটি বহির্বিশ্বশক্তির স্বার্থ—ভারত।

1️⃣ পি.আর. পদ্ধতির মূল কাঠামো: সংখ্যার খেলায় সরকার গঠন

পি.আর. পদ্ধতিতে কোন প্রার্থী নয়, ভোট দেয়া হয় দলকে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তারা সেই অনুযায়ী সংসদে আসন পাবে। অর্থাৎ, যদি কোনো দল ৩০% ভোট পায়, তারা ৩০% সংসদ সদস্য পাবে।

এই ব্যবস্থায়:

  • ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন দলগুলোও সংসদে ঢুকে যাবে
  • বড় দলগুলোর এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ থাকবে না
  • একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গঠনের জন্য জোট বাধতে হবে
  • এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এই জোট হবে অস্থির, ভঙ্গুর ও দ্বন্দ্বপূর্ণ
2️⃣ বাংলাদেশে পি.আর. পদ্ধতি চালু হলে কী ঘটবে? বাস্তব চিত্র

বাংলাদেশের রাজনীতি বহুদিন ধরেই বিভক্ত, দলাদলিপূর্ণ এবং বিদেশনির্ভর। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, বরং প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। এই পরিস্থিতিতে পি.আর. পদ্ধতি চালু হলে কী ঘটবে?

✅ সংসদে থাকবে ৭-৮টি দল
✅ একটি দলও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না
✅ সবসময় দর কষাকষির মাধ্যমে জোট সরকার হবে
✅ ছোট দলগুলো জোট ভেঙে ফেলার হুমকি দেবে
✅ সরকার যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে

এখন প্রশ্ন হলো, কে চায় বাংলাদেশের এই ভঙ্গুরতা?—উত্তর একটাই: ভারত।

3️⃣ ভারতের কৌশলগত আগ্রহ: বাংলাদেশে পি.আর. চালু মানেই নিয়ন্ত্রণ সহজতর

ভারতের বিদেশনীতি খুবই কৌশলী। তারা চায়:

  • বাংলাদেশে কখনোই একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও ইসলামপন্থী নেতৃত্ব ক্ষমতায় না আসুক
  • সরকার দুর্বল থাকুক, যেন সময়মতো হস্তক্ষেপ করা যায়
  • সীমান্ত, পানি, বাণিজ্য, সামরিক বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতনির্ভর থাকুক

পি.আর. পদ্ধতি চালু হলে ভারত কী সুবিধা পাবে?

🟠 একাধিক দল সংসদে থাকবে—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা (RAW) সহজেই ভাঙনের রাজনীতি খেলতে পারবে
🟠 তারা একদলকে লোভ দেখাবে, আরেক দলকে ব্ল্যাকমেইল করবে
🟠 জোট সরকারে মতবিরোধ সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটাবে
🟠 রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যস্ততা থাকবে ক্ষমতা রক্ষায়, দেশ রক্ষায় নয়
🟠 এই অস্থিরতার সুযোগে ভারত তার "রিজিওনাল হেজেমনি" অর্থাৎ আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে

4️⃣ জামায়াত, চরমোনাই ও ইসলামী দলগুলোর জন্য একটি সতর্ক বার্তা

জামায়াত বা চরমোনাইয়ের মতো দলগুলো মনে করছে, তারা এই পদ্ধতিতে ভোট পেয়ে সংসদে যাবে, রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশীদার হবে। তাদের চিন্তা ভুল নয়—but অসম্পূর্ণ এবং বিপজ্জনক।

✅ সংসদে যাওয়া মানেই ক্ষমতা নয়
✅ যদি আপনি ২০টি আসন পান, কিন্তু সরকার গঠন না করতে পারেন, আপনি কি কিছু করতে পারবেন?
✅ বড় দলের উপর নির্ভরশীল থাকলে আপনি স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না
✅ ভারত-সমর্থিত কোনো দল যদি জোটে আপনাকে বাদ দিতে চায়, তারা সেটা পারবে
✅ সরকার যদি বারবার ভেঙে পড়ে, আপনি চাইলেও কিছু করতে পারবেন না

এর মানে কী?
👉🏼 আপনি মাঠে থাকবেন, কিন্তু খেলার নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে থাকবে।

5️⃣ বাস্তব উদাহরণ: কোথায় পি.আর. ব্যর্থ হয়েছে?

বিশ্বে বহু দেশ পি.আর. পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অস্থির দেশগুলোতে এটি ব্যর্থ হয়েছে:

  • ইতালি: ১৯৫০–৯০ পর্যন্ত প্রতি এক-দেড় বছরে সরকার পরিবর্তন হয়েছে
  • ইসরায়েল: সরকার গঠনের জন্য ক্ষুদ্র দলগুলোকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে মূলনীতি বিসর্জন দিতে হয়েছে
  • নেপাল: পি.আর. চালুর পর রাজনৈতিক অস্থিরতা এতটাই বেড়েছে যে দেশটি কয়েক বছরেই ১৩ বার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করেছে

বাংলাদেশের চেয়ে এই দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী ছিল, তবুও ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশে কি হবে?

6️⃣ পি.আর. মানেই জনগণের বিভ্রান্তি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি

পি.আর. পদ্ধতির মোহে পড়ে জনগণ ভাবছে—এতে সবাই অংশ নিতে পারবে। কিন্তু কেউ বুঝছে না:

  • সরকার যখন বারবার ভাঙবে, তখন উন্নয়ন থেমে যাবে
  • বিদেশি শক্তি সিদ্ধান্ত নেবে কারা ক্ষমতায় থাকবে
  • দেশজুড়ে থাকবে অনিশ্চয়তা, সংঘাত, দুর্নীতির বিস্তার
  • সেনাবাহিনী, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন—সব কিছুতে পড়বে রাজনৈতিক প্রভাব
  • জনগণ কোনো স্থির নেতৃত্ব পাবে না, একদিন এক নেতা, আরেকদিন আরেক নেতা—বিশৃঙ্খলা হবে অভ্যন্তরীণভাবে

এটি কোনো গণতন্ত্র নয়, এটি নতুন উপনিবেশিকতা—ভারতের মাধ্যমে।

🏁 উপসংহার: একটি সরল কিন্তু শক্তিশালী বার্তা

পি.আর. পদ্ধতি নিয়ে যারা উদ্দীপ্ত, তারা বুঝে বা না বুঝেই এমন একটি পথে হাঁটছে, যা দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলবে।
এই পদ্ধতি এখনই প্রতিহত করা না গেলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ হবে এক বিভ্রান্ত, দুর্বল, ভারতনির্ভর রাষ্ট্র।
সকল ইসলামপন্থী দল, জাতীয়তাবাদী শক্তি ও সাধারণ জনগণের এখন একটাই কর্তব্য—

এই পি.আর. ফাঁদের বিপদ বুঝে, এর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা।
নিজস্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, বিদেশি কৌশলের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
Type here...
-->