
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সাপ ধরতে গিয়ে সাপুড়ের মর্মান্তিক মৃত্যু
📍 কুমিল্লা, ২০ জুলাই ২০২৫: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোড়েশ্বর গ্রামে সাপ ধরতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ে আব্দুল মান্নান ওরফে মনা মিয়া (৫০) নামে এক অভিজ্ঞ সাপুড়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মনা মিয়া উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের শিহর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে। তিনি দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে পেশাদার সাপুড়ে হিসেবে কাজ করতেন। জানা যায়, তার পূর্বপুরুষরাও একই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ছোটবেলা থেকেই সাপ ধরার অভিজ্ঞতা ছিল তার। তিনি নিজেই তার নানার কাছ থেকে সাপ ধরার কৌশল শিখেছিলেন।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনার দিন সকালবেলা মোড়েশ্বর গ্রামের একটি বাড়িতে বিষাক্ত সাপ দেখা দিলে, বাড়ির মালিক সাপ ধরার জন্য মনা মিয়াকে খবর দেন। চুক্তি অনুযায়ী তিনি সেখানে গিয়ে সাপ ধরতে শুরু করেন। কিন্তু অসাবধানতাবশত সাপটি আচমকা তার ডান হাতের আঙুলে কামড়ে দেয়।
সাপের কামড় খাওয়ার পরপরই তিনি নিজে তার হাত বেঁধে দেন এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষতস্থানে রক্ত বার করার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি খানিকক্ষণ মাটিতে বসে ছিলেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
চিকিৎসা ও মৃত্যু
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, মনা মিয়াকে হাসপাতালে আনার পরপরই তাকে অ্যান্টিভেনম (সাপের বিষের প্রতিষেধক) প্রয়োগ করা হয়। তবে ইতোমধ্যেই বিষ তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, সাপটি অত্যন্ত বিষাক্ত ছিল এবং বিষ প্রয়োগের সাথে সাথে শরীরে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে ফজলুল হক সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, "সাপের কামড়ে একজন অভিজ্ঞ সাপুড়ে মারা গেছেন। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই নিহতের পরিবারের।"
পেশাগত অবদান
মনা মিয়ার পরিবার জানিয়েছে, তিনি এ পর্যন্ত শত শত সাপ ধরেছেন। এমনকি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাপ ধরে মানুষকে রক্ষা করতেন। তার এই পেশাগত জীবনের কারণে অনেকেই তাকে 'সাহসী সাপুড়ে' বলেও ডাকতেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।
"মনা মিয়া ছিলেন খুবই অভিজ্ঞ ও পরিশ্রমী মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষকে সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতেন। এমন একজন মানুষের এভাবে চলে যাওয়া আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।" – স্থানীয় বাসিন্দারা
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- অধিকাংশ সাপুড়ে এখনো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন নন
- প্রতিবছর বাংলাদেশে শত শত মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন
- গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত এবং ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরশীলদের মৃত্যুর হার বেশি
- সাপুড়েরা অধিক ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তাদের জন্য নেই আলাদা কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপুড়েদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ, প্রোটেকটিভ গিয়ার এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করা জরুরি। সেইসাথে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা আরও জোরদার হওয়া দরকার।
শেষ খবর
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মনা মিয়ার জানাজা তার নিজ গ্রাম শিহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজন ভেঙে পড়েন।
Join the conversation