জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সপ্তম দিনের বৈঠক
দৈনিক তথ্য তরঙ্গ
সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সপ্তম দিনের বৈঠক সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারে অগ্রগতি

বাংলাদেশে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সপ্তম দিনের বৈঠক গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এই বৈঠকটি দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির জন্য গঠনমূলক আলোচনার এক অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মজবুত করতে এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি সহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পাশাপাশি কমিশনের সদস্যবৃন্দ বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. আইয়ুব মিয়া ও সফর রাজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল:
- নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রদর্শন
- সংবিধানের সংশোধনী
- বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এবং বিরোধী দলকে সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ প্রদান বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব নিয়েও প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ দল সমর্থন জানিয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও গৃহীত হয়নি।
"সংবিধানে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বা এ ধরনের কোনো নতুন কমিটি গঠন আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, যা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়টি মেনে নেওয়ার শর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।"
- বিএনপি প্রতিনিধি
বৈঠকে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
- নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো
- সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি
- জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া
- স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব
- উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি
- জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন
এই বিষয়গুলো পরবর্তী বৈঠকগুলোতে আলোচনার বিষয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
"জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় ঐকমত্য সনদে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে, যা দেশের সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। এই সনদ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
- অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সহ-সভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে সম্পাদিত হচ্ছে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে আরো বিশ্বস্ত ও অংশগ্রহণমূলক করতে সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।
এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা দেশকে নতুন রাজনৈতিক সংকট ও দাঙ্গাবাজি থেকে দূরে রেখে একটি স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করবে। এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
Join the conversation