বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জশিট শুনানি শুরু
দৈনিক তথ্য তরঙ্গ
সত্যের পথে নির্ভীক সংবাদ
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জশিট শুনানি শুরু
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (ICT‑1) ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে শুরু করেছে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী—খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা—সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে "crimes against humanity" (মানবতাবিরোধী অপরাধ) সংক্রান্ত চার্জশিট শুনানি। স্থানীয় সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি প্রায়শই দেখা যায় না এমন ঘটনা, যেহেতু এ ধরনের উচ্চ‑পর্যায়ের নেতারা আদালতে জীবদ্দশায় অনুপস্থিত থাকলে সাধারণত শোনানি বন্ধ রাখা হতো।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দ্বৈরথ ছোট কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু এমন অভিযোগে একসাথে দুই নেতাকেই একই ট্রাইব্যুনালে আনাটা আন্তর্জাতিক টনের সংবাদে বিরল।
মামলা সংশ্লিষ্ট রয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই‑আগস্ট মাসের গণউচ্চারণ (Mass Uprising) মুহূর্তে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে।
রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউশন পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ করেছে:
- হত্যা ও নির্যাতন – বিক্ষোভ দমন করতে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ।
- হেলিকপ্টার ও ড্রোন থেকে গুলি চালানো – সরকারি নির্দেশে।
- আবু সাঈদের হত্যা – রংপুরে নিরস্ত্র প্রটেস্টার।
- চানখারপুলে ৬ জন হত্যাকাণ্ড – ঢাকার ঘটনা।
- আশুলিয়ায় হত্যাকাণ্ড ও মৃতদেহ পোড়ানো – অন্তত ৬ জন মারা গেছে; ৫ জন গুলিতে নিহত; ১ জন পোড়ানো হয়েছে।
পরিসংখ্যানে রাজধানী ঢাকায় এক লগ্নে প্রায় ৯৫,৩১৩ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়; মূল্যায়ন দেওয়া হয় ৩০৫,৩১১ রাউন্ডের বেশি ছোড়া হয়েছে সারাদেশে। নিহতের সংখ্যা ১,৫০০+ এবং আহত প্রায় ২৫,০০০+ বলে বলা হচ্ছে।
ICT-1 এর বেঞ্চ (জাস্টিস গোলাম মর্তুজা মোজুমদার প্রভৃতি) রাষ্ট্র‑পক্ষের ৮,৭৪৭ পাতার দলিল ও ৮১ জন সাক্ষীর বয়ান — ডিজিটাল ফরেনসিক, ড্রোন/সিসিটিভি ফুটেজসহ উপস্থাপিত প্রমাণ গ্রহণ করেন।
বিচার শুরুর সময় হলে কলাম নেতা (Hasina-কেইলে) উপস্থিত না থাকায় বিচারক 'state-appointed defence counsel' নিয়োগ করেন তাঁদের পক্ষে।
"অভিযোগগুলোকে 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি।"
"আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। আদালত যাচাই করে বললেই মোকাবেলা করা হবে।" — আওয়ামী লীগ
"স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা ছাড়া এটা অনাগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কা ঘনায়" — মানবাধিকার সংস্থা (HRW, Amnesty, UN পর্যবেক্ষক)
আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপটে 'superior command responsibility' ও state complicity তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষকরা বলেছেন:
"যদি বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও বৈধ হয়, এটি বাংলাদেশে উচ্চ‑পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নতুন ধরনের জবাবদিহিতার উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।"
তবে দু'জন নেতাকে একই ঘটনায় বিচার করা নিয়ে কিছু অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন— "এই দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক ধারের—BNP ও AL—নেত্রীর কাছে একই সমঝোতা ও আইনি মানদণ্ড প্রয়োগের বাস্তবায়ন কতটুকু?"
বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল ব্যবস্থা মূলত ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ নিরসনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের গণউচ্চারণ মামলাগুলোতে রাজনৈতিক নেতাদের বিচার নিয়ে এটি নতুন একটি দিগন্ত খুলেছে।
"এটি precedent তৈরির মামলা, যেখানে বাংলাদেশি নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগে উচ্চমান বজায় রাখার নজির তৈরি হচ্ছে।" — তাজুল ইসলাম, ICT
বিচারবিভাগ পরবর্তী দিনে আইনজীবীদের যুক্তি পর্যবেক্ষণ করে শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করবেন।
এক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠন, যথাযথ রিপোর্টিং ও প্রশিক্ষিত প্রতিবেদকদের মাধ্যমে স্বচ্ছতার নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
এই মামলাগুলো যদি প্রতিষ্ঠিত আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে সামান্যতম পক্ষপাত বা রাজনৈতিক চাপ ছাড়া হয়, তবে এটি বাংলাদেশে আইনের শাসন ও রাজনীতিতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি পারে। অন্যদিকে, যদি নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়, তবে এসময় রাজনৈতিক বিমতিত্ব ও অভিঘাত তৈরি হয়ে দিকনির্দেশহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
Join the conversation