বিদ্যুৎ না চালিয়েও হাজার টাকার বিল! ডিজিটাল মিটার নাকি ডিজিটাল বিপদ?
বিদ্যুৎ না চালিয়েও হাজার টাকার বিল! ডিজিটাল মিটার নাকি ডিজিটাল বিপদ?
বিদ্যুৎ ব্যবহার করেননি, অথচ মাস শেষে হাতে পেলেন এক হাজার টাকারও বেশি বিল। এরকম অভিজ্ঞতা এখন শুধু ব্যতিক্রম নয়, বরং নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহু গ্রাহকের জন্য। ডিজিটাল মিটার স্থাপনের পর থেকেই অনেক এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠছে—নতুন প্রযুক্তি মানুষের উপকারে আসবে, না কি বাড়াবে ভোগান্তি?
গ্রাহকদের অভিযোগের সুনামি
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বলের অঞ্চলে বসবাসকারী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কারও বাসায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এক মাস বন্ধ ছিল, তবুও বিল এসেছে দেড় হাজার টাকা। কেউ আবার বলছেন, তারা প্রতিমাসে আগের তুলনায় অর্ধেক ইউনিট ব্যবহার করলেও বিল এসেছে দ্বিগুণ। এসব অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে 'ডিজিটাল মিটার'।
সচেতন নাগরিক ও গ্রাহকরা বলছেন, "আমরা তো মনে করেছিলাম ডিজিটাল মানেই নির্ভুল। কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো। মনে হচ্ছে মিটার চালু থাকলেই যেন বিল তৈরি হচ্ছে, বিদ্যুৎ ব্যবহার হোক বা না হোক।"
লোডশেডিংয়েও মিটার চলছে!
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ না থাকা অবস্থাতেও অনেক গ্রাহক মিটারের পালস দেখতে পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরও মিটারের ডিসপ্লেতে পালসিং চলতে দেখা গেছে, যার অর্থ ইউনিট গণনা অব্যাহত আছে। মিটার পালস করা মানে হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহার ধরা পড়ছে—তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যখন বিদ্যুৎই আসে না, তখন কীভাবে বিল বাড়ছে?
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা মফিজুর রহমান:
"প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। এই সময় মিটার ঘোরে কিভাবে? এটা তো সোজাসুজি চুরি—আমাদের পকেট কাটা।"
কারিগরি ত্রুটি নাকি অন্য কিছু?
এ ধরনের ঘটনায় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও বিস্মিত। অনেক ক্ষেত্রে মিটারের ভেতরে থাকা ব্যাকআপ পাওয়ার (ব্যাটারি) এর মাধ্যমে পালস জারি থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ, আবার কেউ বলছেন মিটারের সেন্সর গরম থাকলে বা ভুলভাবে ইনস্টল করা হলে সেটি বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়াও পালস করতে পারে।
"ডিজিটাল মিটারের কারিগরি দিক ঠিক থাকলেও এর ক্যালিব্রেশন, ইনস্টলেশন বা রিডিং নেওয়ার সময় ত্রুটি থাকলে অতিরিক্ত বিল আসতে পারে। অন্যদিকে, কিছু এলাকায় মিটার 'স্ট্যান্ডবাই লোড' ধরা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছি—যার ফলে মিটার সব সময় ইউনিট গুনছে।"
- প্রযুক্তি বিশ্লেষক
মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম:
"আমি গত মাসে কয়েক দিন বাড়িতেই ছিলাম না। কোনো ফ্যান বা লাইটও চলেনি। অথচ বিল এসেছে ১১৩৫ টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব?"
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার বাসিন্দা:
"ডিজিটাল মিটার বসানোর পর থেকে প্রতিমাসে বিল গড়ে তিনগুণ বেড়েছে।"
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ডিপিডিসি ও নেসকোর গ্রাহকসেবার নম্বরে প্রতিদিন জমা পড়ছে শত শত অভিযোগ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, মিটারগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বসানো হয়েছে, এবং এসব মিটারে ভুল বিল আসার সম্ভাবনা নেই।
"অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ইনস্টলেশনের সময় মিটার ঠিকমতো পরীক্ষা করা হয়নি। আবার রিডিং নিতে গিয়েও ভুল হচ্ছে।
জনগণের দাবি
ভুক্তভোগীরা বলছেন—এটি শুধু টেকনিক্যাল সমস্যা নয়, এটি এখন একটি বড় সামাজিক এবং প্রশাসনিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ এমন একটি মৌলিক পরিষেবা, যেখানে জনগণের স্বার্থ সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
"দয়া করে আমাদের কষ্টের টাকা যেন এভাবে ডিজিটাল ফাঁদে পড়ে নষ্ট না হয়। তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করুন, আর গ্রাহকের ন্যায্যতা নিশ্চিত করুন।"
আপনার অভিজ্ঞতা জানান
আপনার যদি নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ডিজিটাল মিটার নিয়ে অভিজ্ঞতা বা অভিযোগ থাকে, আমাদের পত্রিকায় জানাতে পারেন। ছবি বা ভিডিওসহ পাঠিয়ে দিন— তথ্য তরঙ্গে রিপোর্ট করুন।
ইমেইল: info@dailytotthotorongo.com
No comments